কলকাতা: কলকাতার আলোচিত আরজিকর হাসপতালের জুনিয়র চিকিৎসক ধর্ষণ-খুন মামলায় রায় ঘোষণা হল শনিবার ১৮ই জানুয়ারি। নৃশংস খুনের ১৬২ দিন বিচার পেল তিলোত্তমা। শনিবার ভারতীয় সময় বেলা ২: ৪৫ নাগাদ রায় ঘোষণা করে দোষী সাব্যস্ত করা হয় একমাত্র অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে। আগামী সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ সাজা ঘোষণা করবে আদালত। যদিও এদিনও সঞ্জয় রায় নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছে। তাঁর বক্তব্য, এই কাজ একার পক্ষে করার সম্ভব নয়। কিন্তু বিচারক জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগের প্রমাণ রয়েছে।
গত বছরের ৯ আগস্ট, আরজিকর হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ, ধর্ষণ করে খুন করা হয় তাঁকে। তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ। ১০ আগস্ট এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়।গত ১১ নভেম্বর শিয়ালদহ আদালতে শুরু হয় এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া।, তারপর কেটে গিয়েছে পাঁচ মাস, ন’ দিন। গত ১২ আগস্ট নির্যাতিতার বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকস্তব্ধ পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। গত ১৩ আগস্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।১৮ জানুয়ারি সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত।
তদন্তভার গ্রহণের পর সিবিআই প্রথম থেকেই অভিষুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ারের ফাঁসির আবেদন করেছিল। চার্জশিটেও তাঁকে একা দোষী হিসেবে দাবি করেছিল। সেই প্রেক্ষিতেই এদিন শিয়ালদহ আদালতের বিচারপতি সঞ্জয় রায়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের পর মৃত্যু) এবং ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন। সিভিক ভলেন্টিয়ারের ১০ বছর বা ২৫ বছরের জেল , আমৃত্যু কারাবাস এমনকী মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। ২০ জানুয়ারি সাজা ঘোষণা করবে শিয়ালদহ আদালত।
এদিন সাজা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আদালত কক্ষে সঞ্জয় চিৎকার করে ওঠে। সে দাবি করে, “আমি কিছু করিনি,আমি নির্দোষ। যারা করেছে তাদের কেন ছাড়া হল? আমার কোনও দোষ নেই। সবাই মিলে করেছে। আমি পাপ করিনি। দোষ করলে গলার রুদ্রাক্ষ খুলে পড়ে যেত।” বিচারক জানিয়ে দেন, সোমবার সাজা ঘোষণা। সেদিন সঞ্জয়কে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে।
নির্যাতিতার বাবা-মা অবশ্য সিবিআই তদন্তেও যে খুশি নন সে কথা বারবার জানিয়েছেন। আরজি কর কাণ্ডের রায় বেরোনোর আগে এদিন নির্যাতিতার বাবা-মা বলেছিলেন, মেয়েকে হারানোর পর তাঁদের সব হারিয়ে গেছে। তাই বিচারকের রায়ে তাঁদের আর কিছুই এসে যাবে না। তবে সত্যিই যদি অভিযুক্তরা ধরা পড়ত আর তাদের শাস্তি হত, তবে তাঁদের মেয়ের আত্মার শান্তি হত। তাঁরা মনে করছেন, সব চেয়ে বড় দোষীরাই এখনও অধরা রয়ে গেছেন।
তাঁরা দাবি করে এসেছেন যে, এই ঘটনা সঞ্জয় রায়ের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। সিবিআই মূল দোষীদের আড়াল করছে বলেও সন্দেহ করেছেন তাঁরা। এছাড়া প্রতিবাদী জুনিয়র ডাক্তার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের একাংশও মনে করে, এই ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত।
No comments:
Post a Comment