পাকিস্তানকে আবারও এক ধাক্কা দিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সাময়িকভাবে মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা পাকিস্তানকে দেওয়া অনেক আর্থিক ও উন্নয়ন প্রকল্পের সংকট আরও গভীর করেছে। পাকিস্তানি সংবাদ চ্যানেল ডন এবং জিও নিউজের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সাহায্য কর্মসূচি পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন সাহায্য এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি
এই স্থগিতাদেশের ফলে ইউএসএআইডি এবং মার্কিন দূতাবাস পরিচালিত অনেক উন্নয়ন প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ, জ্বালানি খাতে বড় প্রকল্প, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত কর্মসূচি।
পাকিস্তান ইতিমধ্যেই একটি গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি, যেখানে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ১ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার। সম্প্রতি, পাকিস্তান আইএমএফ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারের ত্রাণ প্যাকেজ পেয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও, দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার মাত্র ৩% বলে জানা গেছে।
মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্কের উত্থান-পতন
১৯৪৭ সাল থেকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে প্রায় ৬৭ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। বিশেষ করে ৯/১১ হামলার পর, আমেরিকা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বলে মনে করে। কিন্তু, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং তালেবানদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর, আমেরিকার কাছে পাকিস্তানের কৌশলগত গুরুত্ব হ্রাস পায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগেও তার মেয়াদে (২০১৭-২০২১) পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন এবং বলেছিলেন যে আমেরিকান করদাতাদের অর্থ সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়।
ভারত ও বাংলাদেশের উপর প্রভাব
আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির এই পরিবর্তন কেবল পাকিস্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও একই রকম খবর এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কিছু সাহায্য কর্মসূচিও স্থগিত করেছে।
এই মুহূর্তে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট নয়, তবে মার্কিন সহায়তা কর্মসূচি পর্যালোচনাধীন রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালার অধীনে ভারতকে আর্থিক সহায়তায় কোনও বড় ধরনের হ্রাস হবে না, কারণ আমেরিকা ভারতের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে অগ্রাধিকার দেয়।
পাকিস্তানের উপর প্রভাব এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং এফডিআই প্রবাহের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই সিদ্ধান্তটি বিশেষ করে পাকিস্তানের নতুন সরকারের জন্য উদ্বেগের বিষয়, কারণ দেশটি ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। মার্কিন প্রশাসন বলছে যে আগামী ৯০ দিনের জন্য সাহায্য বন্ধ থাকবে এবং এই সময়ের মধ্যে পাকিস্তান আমেরিকান তহবিল সঠিকভাবে ব্যবহার করছে কিনা তা পর্যালোচনা করা হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই নীতি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে আমেরিকা এখন তার মিত্র দেশগুলিকে প্রদত্ত সাহায্যের উপর কঠোর নজরদারি রাখতে চায়। পাকিস্তানকে সাহায্য বন্ধ করে দিয়ে আমেরিকা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয়দানকারী দেশগুলিকে আর কোনও সাহায্য দেওয়া হবে না। আগামী সময়ে পাকিস্তান এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্তের কী প্রভাব পড়বে তা দেখা আকর্ষণীয় হবে।
No comments:
Post a Comment