ডায়াবেটিস এমন একটি সমস্যা যা আজকের সময়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এটি কেবল বয়স্কদের মধ্যেই নয়, তরুণ এবং শিশুদের মধ্যেও ঘটছে। আজকাল, আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা ডায়াবেটিসের একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, সময়মতো সনাক্তকরণ এবং নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অনেক বড় বিপদ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। ডায়াবেটিসে আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে হয়। খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রার উপর নজর রাখা এই রোগ শনাক্তকরণ এবং পরিচালনায় একটি বড় ভূমিকা পালন করে। চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য, আমরা ডায়াবেটিসের খাদ্যতালিকায় কোন খাবারগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সেদিকে খেয়াল রাখি, কিন্তু প্রায়শই অনেকেই জানেন না যে রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা কত হওয়া উচিত? আসুন জেনে নিই খাবার খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা কত হওয়া উচিত এবং কখন এটি ডায়াবেটিস হিসেবে বিবেচিত হয়।
রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা কত? রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা কত?
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণকে রক্তে শর্করার মাত্রা বলা হয়। এটি শরীরের শক্তির প্রধান উৎস এবং এর মাত্রা সারা দিন ধরে পরিবর্তিত হয়, তবে সাধারণভাবে, একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য স্বাভাবিক রক্তে শর্করার মাত্রা নিম্নরূপ:
খালিপেটে: ৭০-১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার
খাবার পর: ১৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের কম
খাবার খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা কেন বেড়ে যায়?
আমরা যখন খাবার খাই, তখন আমাদের শরীর খাবার হজম করে এবং গ্লুকোজে রূপান্তরিত করে। এই গ্লুকোজ রক্তে যায় এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে শক্তি সরবরাহ করে।
তবে, যদি শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে বা শরীর সঠিকভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে না পারে, তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে শুরু করে। একে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলা হয়।
ডায়াবেটিস কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য, ডাক্তাররা সাধারণত কিছু রক্তে শর্করার পরীক্ষা করেন। তাদের স্বাভাবিক পরিসর নিম্নরূপ:
খালি পেটে রক্তে শর্করার পরীক্ষা:
যদি এটি ১২৬ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা তার বেশি হয় তবে এটি ডায়াবেটিসের লক্ষণ।
খাবারের পর রক্তে শর্করার পরীক্ষা:
খাওয়ার ২ ঘন্টা পরে যদি রক্তে শর্করার পরিমাণ ২০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা তার বেশি হয়, তাহলে তাকে ডায়াবেটিস বলে মনে করা হয়।
HbA1c পরীক্ষা:
এই পরীক্ষাটি গত ৩ মাসের গড় রক্তে শর্করার মাত্রা বলে। যদি এটি ৬.৫ শতাংশ বা তার বেশি হয়, তাহলে এটি ডায়াবেটিসের লক্ষণ।
প্রিডায়াবেটিস কী? , প্রিডায়াবেটিস কী?
ডায়াবেটিসের আগের অবস্থাকে বলা হয় প্রিডায়াবেটিস। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কিন্তু ডায়াবেটিসের মাত্রার চেয়ে কম থাকে।
খালি পেটে রক্তে শর্করার পরিমাণ: ১০০-১২৫ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার
খাবারের পর রক্তে শর্করার পরিমাণ: ১৪০-১৯৯ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার
প্রিডায়াবেটিস রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে এবং সময়মতো তাদের খাদ্যাভ্যাসের প্রতি মনোযোগ দিয়ে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন?
সুষম খাদ্য: শাকসবজি, ফলমূল, গোটা শস্যের মতো ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান। উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম করুন।
মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা: যোগব্যায়াম এবং ধ্যানের সাহায্য নিন।
রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ: নিয়মিত আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করুন।
খাবার খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা আমাদের স্বাস্থ্যের একটি বড় সূচক। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করলে ডায়াবেটিস এবং এর সাথে সম্পর্কিত জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদি রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন এবং আপনার জীবনযাত্রার মান উন্নত করুন।
দাবিত্যাগ: পরামর্শ সহ এই বিষয়বস্তু শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য প্রদান করে। এটি কোনওভাবেই যোগ্য চিকিৎসা মতামতের বিকল্প নয়। আরও তথ্যের জন্য সর্বদা একজন বিশেষজ্ঞ বা আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
No comments:
Post a Comment