বাংলাদেশে হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে লাপাতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী এক ডজনেরও অধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো এসব শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অতীত দুর্নীতি-অপকর্ম বিচারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ৬ আগস্ট থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালু আছে। ১৮ আগস্ট থেকে সশরীরে ক্লাস চালু হয়েছে। কিন্তু একমাস ধরে দেখা মিলছে না আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক কর্মকর্তার।
এসব শিক্ষক-কর্মকর্তারা হলেন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন মাহি ও নিউটন হাওলাদার, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সাবেক ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা জিএম আল আমিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিনহাজ উদ্দিন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা কামাল ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল অদুদ ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মোবারক হোসেন, কম্পিউটার সাইন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সো. আমিনুল ইসলাম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামরুন্নাহার লিপি। এসব শিক্ষকদের অধিকাংশই ৩ আগস্ট গণবভনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং কঠোর হাতে ছাত্র আন্দোলন দমন করার জন বলেন। এর পর সরকার পতনের একদিন আগে ৪ আগস্ট জবি ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ছাত্র আন্দোলনকারীদের সাম্প্রদায়িকতার দোষর ও পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী বলে দাবি করেন।
এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক ফারজানা মান্নান ও ফারজানা হক টুম্পাও সরকার পতনের পর থেকে অনুপস্থিত আছেন। ফারজানা মান্নানের স্বামী জবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও ফারজানা হক টুম্পার স্বামী সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল। এ দুজনই স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে চাকরি নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুপস্থিত কর্মকর্তারা হলেন, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি ও ডেপুটি রেজিস্টার আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনির, জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্টোর কীপার এনামুল হক, সেকশন অফিসার গ্রেড-১ ইশরাত জাহান (অরচি)। কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ইসরাত জাহান রেজিস্ট্রার দপ্তরে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অন্যান্য কর্মকর্তাদের তটস্থ করে রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর মধ্যে ইসলামিক স্টাডিজ, বাংলা সহ আরও কয়েকটি বিভাগের চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের বরখাস্তের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাস এক মাসের ছুটি নিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা মিল্টন বিশ্বাসকে বিভাগে কোনভাবে প্রবেশ করতে দিবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ছুটি নেওয়ার বিষয়টি মিল্টন বিশ্বাস নিজেই স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, যে সকল শিক্ষকেরা আমাদের ছাত্র সমাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়েছে, তাদের শিক্ষক বলতে আমাদের লজ্জা হয়। এসব শিক্ষক ৩ আগস্ট গণভবনে গিয়ে গণহত্যাকে সমর্থন দিয়েছে। তারা শিক্ষক হিসেবে নিজেদের নৈতিক মানদণ্ড হারিয়েছে। তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা কামালকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, আপাতত আমার কোনো ক্লাস বা পরীক্ষা নেই, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছিনা। চেয়ারম্যান স্যার ক্লাস দিলেই আসব।
পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার বলেন, ছাত্রলীগ নেতা তরিকুলের বউ ফারজানা হান্নান ও রাসেলের বউ ফারজানা হক তুম্পা এখানে চাকরি করতে। তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাকরি নিয়েছিল কিনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার বলেন, তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে আমি বেশি কিছু জানি না। তবে টুম্পা নিয়মিত ক্লাস নিতে আসতো না। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তারা আর ক্লাস নিতে আসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
No comments:
Post a Comment