কোত্তানকুলাঙ্গার দেবী মন্দির, পুরুষদের সাজতে হয় মহিলাদের বেশ
মৃদুলা রায় চৌধুরী, ০৫ মে : আমাদের দেশে অনেক দেব-দেবীর মন্দির রয়েছে। এই সমস্ত মন্দিরে কিছু বিশেষ নিয়ম মানা হয়। কিন্তু কিছু মন্দিরের নিয়ম বিস্ময়কর। এমনই একটি মন্দির হল কেরালার চাভারা গ্রামের কোত্তানকুলাঙ্গারা দেবী মন্দির। এখানে বছরের পর বছর ধরে একটি প্রথা অনুসরণ করা হয়। এই মন্দিরে প্রবেশের জন্য পুরুষদেরও মহিলাদের মতো ১৬ সাজ করতে হয়।
কেন পুরুষদের এমন করতে হয় :
এই মন্দিরে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই মন্দিরে, শুধুমাত্র মহিলা এবং নপুংসকরা দেবীর পূজা করতে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারেন। একজন পুরুষকে যদি দেবীর দর্শন বা পূজা করতে হয়, তাহলে তাকে নারীর মতোই ১৬টি সাজ করতে হবে।
এই প্রথা সম্পর্কে একটি বিশ্বাস আছে যে যে কোন পুরুষ নারীর ছদ্মবেশে এই মন্দিরে যান এবং ষোলটি অলংকরণ করেন, চাকরিতে পদোন্নতি পান এবং কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি পান। এছাড়াও বিবাহ সংক্রান্ত কোন সমস্যা থাকলে তাও মিটে যায়। প্রেমের বিয়ের বাধা দূর হয়। এছাড়া বিবাহিত জীবনে কোনো ঝামেলা বা দুঃখ থাকলে দেবীর কৃপায় দাম্পত্য জীবনে মাধুর্য বিরাজ করে।
বিশেষ উৎসব পালিত হয়:
শ্রী কোত্তানকুলাঙ্গারা দেবী মন্দিরে প্রতি বছর চাম্যবিলাক্কুর উৎসব বিশেষভাবে পালিত হয়। এতে অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক পুরুষ ভক্ত আসেন। মন্দিরে প্রবেশের জন্য তাদের শুধু মহিলাদের পোশাকই পরতে হবে না বরং ১৬টি মেক-আপ করতে হবে এবং গয়না, গজরা ইত্যাদি পরতে হবে। এই উৎসবের সময় একদল পুরুষ হাতে প্রদীপ নিয়ে মিছিল বের করে। এখানে তাঁর প্রার্থনার উত্তরে দেবীর কাছে তাঁর পবিত্র নিবেদনের একটি অংশ রয়েছে।
অন্যান্য শহর থেকে আগত পুরুষ ভক্তদের জন্য একটি পৃথক মেক-আপ রুম তৈরি করা হয়েছে যাদের মেক-আপ সামগ্রী নেই। যেখানে নারীদের মতো ১৬টি মেকআপ করেন তারা। জামা-কাপড় ইত্যাদির ব্যাপারে এই মন্দিরে প্রবেশের নিয়ম ও শর্ত থাকতে পারে তবে বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এখানে সব বয়সের পুরুষ নারীদের মতো সাজে প্রবেশ করে দেবীর পূজা করতে পারে।
স্বয়ং দেবী আবির্ভূত :
এখানকার স্থানীয় লোকজন জানান, এই মন্দিরে স্বয়ং দেবীর মূর্তি আবির্ভূত হয়েছিল। প্রথমত, কিছু রাখাল এই মূর্তিটি দেখে বস্ত্র, ফুল ইত্যাদি দিয়ে দেবীর পূজা করে। কিছুকাল পরে এই মন্দিরটি নির্মিত হয়। এই মন্দির সম্পর্কে আরেকটি জনপ্রিয় বিশ্বাস হল যে কিছু লোক যখন একটি পাথরের উপর একটি নারকেল ভাঙ্গে, তখন পাথর থেকে রক্তের স্রোত প্রবাহিত হয়। এই অলৌকিক ঘটনা দেখে মানুষ এই শক্তিপীঠে পূজা শুরু করে। এই ঘটনার পর থেকে এই মন্দিরের বিশ্বাস তুঙ্গে।
No comments:
Post a Comment