আইনের খপ্পর থেকে সত্যি রেহাই পেলেন শাহজাহান শেখ?
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা, ২৪ ফেব্রুয়ারী : উত্তর ২৪ পরগণার সন্দেশখালির অমুকুটহীন রাজা টিএমসি নেতা শাহজাহান শেখের ইডি অফিসারদের উপর হামলার পর তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। শাহজাহান শেখ ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন নারীরা। তাদের বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। হিংসা আর প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে বার্তা। কিন্তু শাহজাহান শেখ ও তার সমর্থকদের নৃশংসতা শুধু একদিনের জন্য স্থায়ী হয়নি। বছরের পর বছর ধরে তিনি আইনের খপ্পর এড়িয়ে চলেছেন।
৮ জুন ২০১৯-এ দেবদাস মণ্ডলকে অপহরণ করা হয়। তার স্ত্রী পরের দিন অপহরণের জন্য এফআইআর দায়ের করেন। পরে কয়েক টুকরো একটি মরদেহ পাওয়া যায়। ডিএনএ প্রোফাইলিং দেখায় যে এই দেহ দেবদাস মণ্ডলের। এ মামলার এক নম্বর আসামি শেখ শাহজাহান ও তার সহযোগীরা।
কিন্তু যে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এতে শেখ শাহজাহানকে আসামি করা হয়নি এবং যাদের নাম এফআইআর-এ নেই তাদের আসামি করা হয়েছে। এফআইআর-এ যাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট ছিল সেই ২৩ জনের নাম। তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়নি। হত্যার তিন বছর পর এই চার্জশিটও দাখিল করে পুলিশ।
প্রদীপ মন্ডল এবং সুকান্ত মন্ডলের হত্যাকান্ড ৮ই জুন ২০২৯ তারিখে সংঘটিত হয়। দুজনেই তাদের পোশাকের দোকানে উপস্থিত ছিলেন। শেখ শাহজাহান ও তার দোসররা আসেন। প্রদীপ মন্ডলের মাথার পেছনে গুলি লাগে পয়েন্ট ব্ল্যান্ক রেঞ্জ থেকে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয় এবং তার দুই চোখই পড়ে যায়। সুকান্ত মন্ডলকেও বিন্দু কালো রেঞ্জ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এই ডাবল মার্ডারের বিচার এখনো শুরু হয়নি। এ ক্ষেত্রেও যাদের নাম এফআইআর-এ রয়েছে। যাদের চার্জশিট করা হয়নি এবং যাদের নাম এফআইআর-এ নেই। তাকে আসামি করা হয়। এই ডাবল খুনের ঘটনায় এখনো পাঁচজন পলাতক থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে আদালত থেকে এখনো ওয়ারেন্ট নেওয়া হয়নি।
বিশেষ বিষয় হল এই এফআইআর-এও প্রধান অভিযুক্ত শেখ শাহজাহান, তবে এফআইআর-এর কপি দেখলে কালো রং দিয়ে শেখ শাহজাহানের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রদীপ, সুকান্ত এবং দেবদাস মণ্ডল, তিনজনই বিজেপি কর্মী এবং তিনজনই তফসিলি জাতি থেকে। অভিযোগ অনুসারে, ২০১৯ সালে লোকসভায় বিজেপি যখন সরকার গঠন করেছিল, তখন সন্দেশখালিতে বিজেপি কর্মীদের খুন করা হয়েছিল কারণ এই লোকেরা সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে প্রচার করেছিল।
অভিযোগ করা হয় যে শাহজাহান শেখ টিএমসির একজন শক্তিশালী নেতা ছিলেন এবং অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এ কারণেই তিনটি খুনের ঘটনায় এফআইআরে নাম থাকা সত্ত্বেও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে অভিযোগ।
একই সঙ্গে তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের আধিকারিকদের ওপর হামলার মামলার প্রধান আসামি এবং আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করা হলেও এ মামলায়ও তাকে আজ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি।
শাহজাহান শেখ প্রথমে তাদের অফিসে গিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের আধিকারিকদের মারধর করেন এবং পরে তাদের অফিসে ডেকে বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনায় যথাযথ তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে পিটিশন দায়ের করেছেন মৃতের স্ত্রীরা। এই সব ঘটনা থেকেই স্পষ্ট যে তিনি কীভাবে রাজনৈতিক সুরক্ষা পেয়েছিলেন?
No comments:
Post a Comment