ইডি অফিসারদের ওপর হামলার ঘটনায় NIA তদন্তের দাবি
নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর চব্বিশ পরগনা, ০৫ জানুয়ারি : উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সন্দেশখালিতে অবস্থিত তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে ইডির অভিযান ও হামলার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এই হামলায় রোহিঙ্গাদের হাত ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি? রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে ইডি অফিসারদের উপর হামলার তদন্ত এনআইএ দ্বারা তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন। বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী সোশ্যাল সাইটে ইডি অফিসারদের উপর হামলার নিন্দা করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙ্গে পড়েছে। এই হামলায় রোহিঙ্গারা উপস্থিত ছিল বলে আমার সন্দেহ। আমি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং রাজ্যপালকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি। এই বিষয়টি এনআইএ দ্বারা তদন্ত করা উচিৎ।”
বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষও রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করেছেন। তিনি সরাসরি বলেন, “রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে এনে ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। এরপর সেগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, শাহজাহানের বিরুদ্ধে তিন বিজেপি কর্মী খুনের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ২ জনের দেহ পাওয়া যায়নি। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও এ নিয়ে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, "শাহজাহান শেখের পোষা রোহিঙ্গা গুণ্ডাদের দ্বারা সন্দেশখালীতে ইডি আধিকারিক ও প্রেসের ওপর হামলা হয়েছে।"
স্থানীয় সূত্রের খবর, ইডি আধিকারিকরা যখন সরবেরিয়া গ্রামে শাহজাহানের বাড়ির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তখন একদল গ্রামবাসী তাদের বাধা দেয়। তারা নিজেদেরকে শাহজাহানের অনুসারী দাবি করছিলেন। ইডি আধিকারিকরা তৃণমূল নেতার বাড়ির সামনে অ্যালার্ম তুললেও ভিতর থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। এরপর তিনি দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন। এ সময় তাকে ঘিরে ধরে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় ইডি আধিকারিকদের। তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
স্থানীয় লোকজনের হামলায় তিন আধিকারিক আহত হয়েছেন। ইডি সূত্রে খবর, সন্দেশখালিতে আহত তিন অফিসারের একজন সহকারী পরিচালক রাজকুমার রাম। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অপর দুই অফিসারের নাম অঙ্কুর ও সোমনাথ দত্ত। সংবাদমাধ্যমের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে। তার গাড়ি ও ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।
শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদের ওপর যেভাবে হামলা চালানো হয়। শাহজাহানের সহস্রাধিক অনুসারী কিভাবে একত্রিত হয়ে আক্রমণ করতে পারে? এ নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করছে বিজেপি। বিজেপির দাবি, শেখ শাহজাহান রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেন। আজকের হামলার সঙ্গে ওই রোহিঙ্গারা জড়িত কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। এই ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন বিজেপি নেতারা।
বিজেপির যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, বিজেপি সমস্ত ঘটনাকে সাম্প্রদায়িকভাবে ব্যাখ্যা করে। রাজনীতির পরিবর্তে সাম্প্রদায়িক আলোচনা চলছে।আমাদের জানা যাক যে শাহজাহান শেখ একজন রেশন ডিলার হিসাবে কাজ করেন এবং একজন টিএমসি নেতা। নেতার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে রেশন দুর্নীতি মামলার নথি পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন ইডি কর্তারা। কিন্তু সেদিন নেতার বাড়িতে ঢুকতে পারেননি তারা। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বর্তমানে রেশন কেলেঙ্কারির মামলায় জেলে রয়েছেন।
ইডি রাজ্যে অনেক মামলার তদন্ত করছে, অনেক জায়গায় তল্লাশিও চালানো হয়েছে। তবে এর আগে রাজ্যে এমন হামলার মুখে পড়েনি ইডি।প্রশ্ন উঠছে শাহজাহানের বাড়িতে এমন কী তথ্য রয়েছে যার জন্য তাঁর অনুগামীরা তাঁর ওপর এমন হামলা করেছে? এরপর তার প্রমাণ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। সূত্রের খবর, ইডি সদর দফতরকে এই ঘটনার কথা জানিয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে কলকাতা সহ অন্তত ১৫টি জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছেন ইডি আধিকারিকরা। বনগাঁর শঙ্কর আধ্যার শ্বশুরবাড়ি বিজয়গড়েও তল্লাশি করা হয়।
No comments:
Post a Comment