এখানে মাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে পুজো দেওয়া হয়
মৃদুলা রায় চৌধুরী, ২২ অক্টোবর : হুগলি জেলার ভদ্রেশ্বরের বিগতি চক্রবর্তী পরিবারে ২৯৫ বছর ধরে দূর্গা পূজা হয়ে আসছে। আগের মতোই এখনও ধুমধাম করে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মহালয়ার সাথে সাথে মা দুর্গার আগমন হবে। চক্রবর্তী পরিবারে চলছে পূজার প্রস্তুতি, তবে এখানে শিকল দিয়ে বাঁধা মা দুর্গার প্রতিমা। মা দুর্গাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়, এর পেছনে রয়েছে মজার গল্প। চলুন জেনে নেই-
চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যরা জানান, এক সময় এই পরিবারের প্রায় সবাই তন্ত্র সাধনা করতেন। একইভাবে শাক্ত সম্প্রদায়ের সাধুরাও মায়ের পূজা করতেন। কথিত আছে, আগে দুর্গা প্রতিমা পূজার সময় কেঁপে উঠত। তাই পুজোর পাঁচ দিন মায়ের মূর্তিকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়, যাতে মূর্তি পড়ে না যায় এবং পুজোয় ব্যাঘাত না ঘটে। সেই চর্চা আজও চলছে।
চক্রবর্তী পরিবারের দুর্গাপূজার সময় তিন দিন ধরে বাড়ির পূজায় খাবার দেওয়ার প্রথা রয়েছে। সন্ধিপূজায় ছাগল বলি দেওয়ার প্রথাও রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১১৩৫ সালের দিকে বাংলায় চক্রবর্তী পরিবারের প্রথম পুজো শুরু হয়। চক্রবর্তী তখন পণ্ডিত ছিলেন। পরে তার পূর্বপুরুষরা তন্ত্র সাধনা করেন। আগে খেজুর পাতার ছাউনির নিচে মাটির মন্দিরে পূজা হতো। পরে মন্দিরে বাঁশ ও টালির ছাতা দেওয়া হয়। বর্তমানে সেখানে একটি নবনির্মিত দুর্গা নির্মাণ করা হয় এবং মাতৃদেবীর পূজা করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এক সময় চক্রবর্তী পরিবারকে আর্থিক সংকটে পড়তে হয়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে তিনি পূজা বন্ধ করে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার কাছে ফল কেনার টাকা ছিল না। এ সময় মা তাকে স্বপ্নে দেখা দেন এবং তাকে গ্রাম ছেড়ে না যেতে বলেন।
সেই মায়ের আদেশে প্রতিবেশী সাঁতার বাড়ির কলাগাছের পুজা আবার শুরু হল থোর আর মান্নার বাড়ির ঘি দিয়ে। তাই নবমীর দিন থোর নৈবেদ্য দিয়ে পূজা করা হয়।পূজার দিন সারাদিন ভক্তি সহকারে পূজা করা হয় এবং আজও একই ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে মা দুর্গার পূজা করা হয়।
চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যরা জানান, মা দুর্গাপূজা সম্পূর্ণ ভক্তি ও বিশ্বাসের সঙ্গে করা হয়। মাকে পুরনো রীতি অনুযায়ী পূজা করা হয় এবং পারিবারিক রীতি অনুযায়ী মাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।
No comments:
Post a Comment