পাপ থেকে মুক্তির আশায় সিংহ তপস্যা করেছিল এখানে তপস্যা
মৃদুলা রায় চৌধুরী, ২৯ অগাস্ট : উজ্জয়নীর ৮৪টি মহাদেবের মধ্যে শ্রী সিংহেশ্বর মহাদেব ৫৪তম। কথিত আছে, কেউ যদি জেনে-বুঝে বড় পাপ করে থাকে, তাহলে এখানে এসে বাবার পূজো করলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সিংহেশ্বর মহাদেব মন্দিরের পুরোহিত পন্ডিত গৌরব সানচোরা বলেছেন যে ওখালেশ্বর শ্মশানের পথে গদকালিকা মাতা মন্দিরটি ভগবান শ্রী সিংহেশ্বর মহাদেবের একটি অতি প্রাচীন মন্দির।
পুরোহিত বলেন, মন্দিরে শিবলিঙ্গ রূপে বসে আছেন ভগবান শঙ্কর। এই মূর্তিটি কালো পাথরের হওয়া ছাড়াও এখানে একটি পিতলের জলাশয়েও রয়েছে। মন্দিরে শিব পরিবারের পাশাপাশি গেটে মহাদেবের প্রিয় নন্দী ও সর্প দেবতাও রয়েছে।
পন্ডিত গৌরব সানচোরা জানান, সারা বছর এই মন্দিরে ঈশ্বরের বিশেষ পূজো -অর্চনা ও অভিষেক হলেও শ্রাবন মাসে এখানে পূজোর নিজস্ব বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এই মাসগুলোতে ভগবানের পবিত্রতা ও উপাসনা করলে ভক্তরা কাঙ্খিত ফল লাভ করেন। এই মন্দিরে ভস্ম, ভাং, ঔষধ, পঞ্চামৃত রুদ্রাভিষেক সহ প্রতিদিন ৫ জন ব্রাহ্মণ দ্বারা ভগবানের বিশেষ সাজ করানো হয়।
মন্দিরের পুরোহিতের মতে, মন্দির নিয়ে অনেক বিশ্বাস থাকলেও প্রদোষে উপবাস করে ভগবান শ্রী সিংহেশ্বর মহাদেবকে গম নিবেদন করা হলে সন্তানের জন্ম হয়।
শ্রী সিংহেশ্বর মহাদেবের কিংবদন্তি:
শ্রী সিংহেশ্বর মহাদেব মন্দির সম্পর্কিত প্রাচীন কাহিনী খুবই জনপ্রিয়। স্কন্দপুরাণের অবন্তী বিভাগে এর উল্লেখ আছে। কিংবদন্তি অনুসারে, একবার মা পার্বতী গৌড় বর্ণের জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলেন। তপস্যার তীব্রতায় তিন ভুবনেই হৈ চৈ পড়ে যায়। দেবতারা ব্রহ্মার কাছে গেলেন। সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রহ্মা সেখানে আসেন যেখানে মা পার্বতী তপস্যা করছিলেন।
ব্রহ্মা মা পার্বতীকে তপস্যার উদ্দেশ্য জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন- ভগবান শিব আমাকে কালী বলেন, আমিও ফর্সা চেহারা চাই। ব্রহ্মা বলেন- তোমার ইচ্ছা শীঘ্রই পূরণ হবে। কিন্তু মা পার্বতী এই কথা শুনে আরও ক্রুদ্ধ হলেন, যার ফলে একটি সিংহের জন্ম হল। সিংহ ক্ষুধার্ত ছিল, তাই সে মা পার্বতীকে আক্রমণ করল। কিন্তু পার্বতীর তীক্ষ্ণতা এত বেশি ছিল যে এই সিংহ হিংস্র হয়ে উঠতে পারেনি।
এর পরে, সিংহের অপরাধবোধ হওয়ায় প্রায়শ্চিত্ত করতে চেয়েছিলেন। পার্বতী অবিলম্বে তাকে মহাকাল বনে গদকালিকা মাতার মন্দিরের পেছনে শিবলিঙ্গের পূজো করতে বলেন। সিংহ কঠিন তপস্যা করলেন। বহু বছর পর মা পার্বতী এখানে আসেন। তিনি যখন সিংহের সাথে শিবলিঙ্গ দর্শন করেন, তখন তিনি এখানকার শিবলিঙ্গের নাম দেন সিংহেশ্বর মহাদেব।
বহু বছর পরে, এই কারণে এই স্থানটি সিংহেশ্বর মহাদেব নামে প্রসিদ্ধ হয় এবং মা পার্বতীও গৌড় রুপ লাভ করেন।
No comments:
Post a Comment