যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রের মৃত্যু! তদন্তে পুলিশ
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা, ১১ আগস্ট : কলকাতা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের মৃত্যু নিয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। বাংলা স্নাতক কোর্সে ভর্তি হওয়া স্বপ্নদীপ কুন্ডুর মৃত্যুর তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বৃহস্পতিবার রাতভর শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদে মৃত্যুর পেছনে র্যাগিংয়ের অভিযোগ বেরিয়ে আসছে। কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, নিহত ছাত্রকে নগ্ন করে দৌড় করানো হয়েছিল। তাকে 'গে' বলে ডাকা হত। এরপর নিহত ছাত্র তার মাকে একাধিকবার ফোন করে।
তার কয়েকজন সহপাঠী জানান, স্বপ্নদীপ র্যাগিং নিয়ে আলোচনা করে জানতে চেয়েছিলেন কবে এই র্যাগিং বন্ধ হবে। স্বপ্নদীপ বলেছিল যে সে ঘুমতে পারছে না। যাদবপুরের ঘটনায় ছাত্রের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ৩০২ ধারা অর্থাৎ খুন এবং ৩৪ যোগ করে তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। তদন্ত দল নাদিয়া পরিদর্শন করেছে এবং তার পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে কথা বলছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের আরেক ছাত্র স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর ফেসবুকে জানান যে তিনিও হোস্টেলে একটি "ভয়ংকর" রাত কাটিয়েছেন। র্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলে তিনি লেখেন, “সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হোস্টেলে ঢোকার নির্দেশ, সারা রাত জেগে ‘ইনট্রো’ নেওয়া ইত্যাদি হয়েছে। আমিও ভয় পাই।" স্বপ্নদীপের বাবা পুলিশকে জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যায় স্বপ্নদীপ তার মাকে বেশ কয়েকবার ফোন করে তার জীবনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল।
বুধবার গভীর রাতে হোস্টেলের বারান্দায় স্বপ্নদীপকে নগ্ন করে দৌড় করানো হয় বলে কয়েকজন ছাত্রের অভিযোগ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বপ্নদীপের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সম্পর্কে তদন্তকারীদের জানানো হয়েছিল এবং মৃত্যুর কারণ পড়ে যাওয়া বলা হয়েছে। এই নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার পুলিশের পাশাপাশি লালবাজার গোয়েন্দা দফতরের আধিকারিকরাও হোস্টেলে যান। সেখানে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। হোস্টেলের তিন ছাত্রকে থানায় ডাকা হয়। সেখানে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়।
স্বপ্নদীপের পরিবার হোস্টেলে 'র্যাগিং'কে মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছে। তার কাকা জানান, ভাস্তা র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছে। পরে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
কাকা অরূপ কুন্ডু বলেন, “সে আত্মহত্যা করেনি। সেই ভালো ছেলে, হঠাৎ কীভাবে মারা গেল। র্যাগিং নিশ্চয়ই হয়েছে। তবে স্বপ্নদীপের পরিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। যুগ্ম সিপি (অপরাধ) শঙ্খ শুভ্র চক্রবর্তী জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক ময়নাতদন্তে জানা গেছে, ওই যুবকের বাম পাশের হাড় ভেঙ্গে গেছে এবং অন্যান্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও তার মাথা, পাঁজর ও মেরুদণ্ডে হাড় ভেঙ্গে গেছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন। কীভাবে মৃত্যু হল, র্যাগিং হয়েছে কি না, ছাত্রর ওপর মানসিক চাপ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
No comments:
Post a Comment