দুর্ধরেশ্বর মহাদেবের মহিমা
মৃদুলা রায় চৌধুরী, ০৬ অগাস্ট : মহাকালের নগরী উজ্জয়িনী ধর্মের নগরী হিসেবে দেশ-বিশ্বে বিখ্যাত। এখানকার শ্রী দুর্ধরেশ্বর মহাদেবের মহিমা অতুলনীয়। শ্রী দুর্ধরেশ্বর মহাদেব সম্পর্কে একটি বিশ্বাস রয়েছে যে এখানে পূজো করলে বিচ্ছিন্ন বা হারিয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যরা পুনরায় মিলিত হয়। চুরাশি মহাদেবের মধ্যে শ্রী দুর্ধরেশ্বর মহাদেব পেয়েছেন চুয়াত্তরতম স্থান। এই শিবলিঙ্গ দেখলেই সহস্ত্র ব্রহ্মহাত্যের মতো মহাপাপ ক্ষমা করা যায়।
দুর্ধরেশ্বর মহাদেব কোথায়:
শিপ্রা নদীর কাছে গন্ধর্ব ঘাটে শ্রী দুর্ধরেশ্বর মহাদেবের একটি অতি প্রাচীন মন্দির রয়েছে। মন্দিরের পুরোহিত পন্ডিত আশুতোষ শাস্ত্রী বলেন, মন্দিরটি পশ্চিম দিকে মুখ করে আছে। যার গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গ রূপে স্থাপিত ভগবান শ্রী দুর্ধরেশ্বর মহাদেবের কালো পাথরের মূর্তি। মন্দিরে শিবের এই মূর্তির পাশাপাশি মা পার্বতী, কার্তিকেয় স্বামী, শ্রী গণেশ ও নন্দীর মূর্তিও রয়েছে।
এর সাথে মন্দিরে দুটি শঙ্খের খোসা এবং সূর্য ও চাঁদের আকৃতি দেখা যায়। মন্দিরের পুরোহিত পণ্ডিত আশুতোষ শাস্ত্রী বলেন, যদিও প্রতিদিন ভগবানের পূজো ও জল নিবেদনের নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে, তবে পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় প্রচুর সংখ্যক ভক্ত মন্দিরে আসেন। কথিত আছে চতুর্দশীতে এখানে পুজো করলে সমস্ত মনস্কামনা পূরণ হয়।
দুর্ধরেশ্বর মহাদেবের পৌরাণিক কাহিনী:
এই মন্দির সম্পর্কিত একটি বিশেষ কাহিনী রয়েছে। কথিত আছে যে রাজা এখানে ভগবানের পূজো করেছিলেন তিনি তার হারানো স্ত্রীকে ফিরে পেয়েছিলেন। তাঁর নামানুসারে শিবলিঙ্গটির নামকরণ করা হয় শ্রী দুর্ধরেশ্বর মহাদেব। স্কন্দপুরাণের অবন্তী অংশের কাহিনী হল নেপালে দুর্ধরেশ্বর নামে এক রাজা ছিলেন। যখন সে বনে বেড়াচ্ছিল, তখন সেখানে একটি মেয়েকে তার পছন্দ হয় আর সেই মেয়েটিকে বিয়ে করতে চান।
তিনি মেয়েটির খবর পান। রাজা মেয়েটির বাবা তপস্বী কল্পের কাছে যান তিনি তার মনের কথা বলেছেন। তপস্বী তার মেয়ের বিয়েতে রাজি হলেন। কিন্তু রাজা স্ত্রীকে প্রাসাদে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে এক বনে নিয়ে গেলেন। আর সেখানে থাকা শুরু করেন।
এদিকে এক রাক্ষস রাজার স্ত্রীকে অপহরণ করে। রাজা বিলাপ করতে থাকেন। তপস্বী কল্প জানতে পেরে তিনি মহাকাল বন উজ্জয়িনীতে অবস্থিত একটি বিশেষ শিবলিঙ্গে পূজো করতে রাজাকে তপস্বী আরও বলেন এর মাধ্যমে আপনি শুধু আপনার হারানো স্ত্রীকে ফিরে পাবেন না, আপনি আপনার হারানো রাজত্বও পাবেন।
রাজা দুর্ধরেশ্বর তপস্বী কল্প দ্বারা উল্লিখিত শিবলিঙ্গের পূজো করেছিলেন, যার কারণে তিনি তার হারানো স্ত্রীকে ফিরে পান। এর সঙ্গে রাজ্যও ফিরে পান । তিনি ছিলেন নেপাল রাজ্যের রাজা। এখানকার শিবলিঙ্গ একই রাজার নামে খুব বিখ্যাত হয়েছিল। এই শিবলিঙ্গটি শ্রী দুর্ধরেশ্বর মহাদেব নামে পরিচিত।
No comments:
Post a Comment