বাংলায় এত বোমা আর বন্দুক আসার নিয়ে পুলিশ কী বলছে?
নিজস্ব প্রতিবেদন, কলকাতা, ১০ জুলাই : নির্বাচনের সময় সহিংসতা নিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।প্রশ্ন উঠছে নির্বাচনের সময় সহিংসতা হওয়ার সময় বোমা, পিস্তল সবই ছিল, কিন্তু পুলিশ কোথায় ছিল?রাজ্যে এত বোমা ও অস্ত্র কোথা থেকে এল?
শনিবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন অস্ত্র নিয়ে গুলি চালানোর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। খোলা পিস্তল নিয়ে ধাওয়া করতে দেখা যায় এক যুবককে। মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার, বীরভূম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ অনেক এলাকায় ভয়ঙ্কর বোমা হামলা হয়েছে। নির্বাচনী সহিংসতা এবং পরবর্তী সহিংসতায় এখনও পর্যন্ত ২০ জন নিহত হয়েছে এবং এখনও রাজ্যের অনেক এলাকা থেকে বিক্ষিপ্ত সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বীরভূম বাগতোই ঘটনার পরে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন এবং অবিলম্বে রাজ্যের সমস্ত অবৈধ অস্ত্র এবং বোমা বাজেয়াপ্ত করার জন্য পুলিশ অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই আদেশের পর ১৫ মাস কেটে গেছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ কি ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করেছে? কিংবা পুলিশ অস্ত্র ও বোমা আটক করতে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
পুলিশ সূত্র বলছে, সীমান্তের ওপার থেকে অন্যান্য রাজ্য থেকে অস্ত্র পৌঁছে যাচ্ছে মূলত রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতায় অপরাধীদের হাতে। পুলিশ দাবি করে, পুলিশের কাছে কোথায়, কার কাছে অস্ত্র, কোথা থেকে বোমা তৈরি হচ্ছে সব তথ্য থাকলেও বাস্তবে নির্বিকার বসে থাকতে হয়।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন আধিকারিককে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কে ব্যবস্থা নেবে? সব আধিকারিকই তাদের পছন্দের জায়গায় থাকতে চান। আর তার সুবিধার জন্যই একদল দুর্বৃত্ত সমস্যা সৃষ্টি করে। পুলিশ আধিকারিকদের এখন ওপর থেকে নির্দেশ পেলেই অভিযান চালান।
থানায় নিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের একটি অংশের ভূমিকাও সামনে এসেছে। অভিযোগ, মূলত রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট এই সিভিক ভলান্টিয়াররা রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকেন। পুলিশ আধিকারিকদের দাবি, এর ফলে নেতার কাছে খবর পৌঁছানোর আগেই গোপনে থানা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চালানো হয়েছে এমন নজির কম। খবরে বলা হয়েছে, রাজ্য পুলিশ বাহিনীতে প্রায় ১.৫ লক্ষ সিভিক ভলান্টিয়ারদের বেশিরভাগই শাসক দলের মন্ত্রী-নেতাদের সুপারিশে নিয়োগ করা হয়েছিল।
অন্য এক থানার আধিকারিক বলেছেন যে দক্ষিণ ২৪ পরগণায় মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে, বিশৃঙ্খলার সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছেও উচ্চ পদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। আসলে তাদের সামনে ছিল বোমার যুদ্ধ। অভিযোগ, নির্বাচন এলেই ঘরে ঘরে বোমা তৈরি হচ্ছে। পুলিশ জানায়, বাড়িতে বোমা তৈরি হলে সে খবর পুলিশের কাছে পৌঁছয় না। পুলিশের তেমন নেটওয়ার্ক নেই। পুলিশ সূত্রে খবর, রাজ্যে অস্ত্র পাচার হয় মূলত বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে।
নির্বাচনের আগে দুই রাজ্যের পুলিশ প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন এই রাজ্যের ডিজি। অভিযোগ, এর আগে যে অস্ত্রটি ভেতরে ঢোকার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল তা এসেছে।
অস্ত্রের দামও সস্তা হয়েছে। মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় একটি সিঙ্গেল শটার পাওয়া যায়। সেভেন এমএম পিস্তল বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকায়। শটগুলিও সহজলভ্য।
তবে রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিক দাবি করেছেন, অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে। ভোটের আগে প্রায় আড়াইশ অবৈধ অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অনেক বোমা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment