স্বামীকে বাঘের হাত থেকে বাঁচিয়ে আনলেন এই মহিলা
নিজস্ব প্রতিবেদন,কলকাতা, ০১ জুলাই : বাঘ প্রায়ই সুন্দরবন এলাকায় গ্রামবাসীদের আক্রমণ করে। কেউ কেউ বাঘের আক্রমণে প্রাণও হারিয়েছেন। কিন্তু সুন্দরবনের সত্যদাসপুরের ৪৫ বছর বয়সী নমিতার গল্প অন্য কথা বলে। তিনি বাঘকে পিটিয়ে স্বামীকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে আনেন। নমিতা যখন চোখের সামনে দেখলেন স্বামীকে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার টেনে নিয়ে যাচ্ছে। নমিতা এক মুহূর্তও ভাবেননি। তিনি হাতে লাঠি নিয়ে বাঘের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে লড়াই করেন।
সাধারণত যারা কাঁকড়ার সন্ধানে যায় তারা বাঘের আস্তানায় যায়। এটাই তার হাতে অস্ত্র। সেই লাঠি নিয়ে বাঘের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নমিতা। একপাশে ছিল ১৭০-১৮০ কেজি ওজনের বাঘ আর অন্য পাশে ছিল পাতলা, বাঁকানো ও ছেঁড়া শাড়ি পরা এই মহিলা। বাঘের থাবা স্বামীর শরীরে আঘাত করছিল। বাঘ স্বামীকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে এবং নমিতা লাঠি দিয়ে তার মুখোমুখি হয়। নমিতা লড়াই করেন। তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে। শুধু বাঘের গায়ে লাঠি চালাতে থাকে।
নমিতার লাঠিটি বাঘের পিঠের পাঁজরে আঘাত করে এবং বাঘও আঘাত পেয়ে হতবাক হয়ে স্বামীকে ছেড়ে বনের দিকে চলে যায়।
পাথরপ্রতিমার জি-প্লটের সত্যদাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা দিলু মল্লিকের স্ত্রী নমিতা এখন 'আসল' নায়িকা। শুক্রবার সকালে সুন্দরবনের বিজুয়ারা জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিল দিলু। এরপর হঠাৎ পেছন থেকে দিলুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তার স্ত্রী নৌকায় ছিলেন। পেছনে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল নমিতা। নমিতা লাঠি দিয়ে বাঘের পিঠে মারতে থাকে। বাঘ তার দিকে এলে নমিতা পিছপা না হয়ে, তাঁর লাঠির বেশ কয়েকটা আঘাতে বাঘ দিলুকে ছেড়ে বনে পালিয়ে গেল।
এরপর তিনি তার আহত স্বামীকে নিয়ে নৌকায় ডাঙ্গায় ফিরে আসেন।আহত দিলুকে উদ্ধার করে পাথরপ্রতিমা ব্লক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হলেও দিলুর মাথায় একাধিক ক্ষত রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও হয়েছিল। রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। দিলুকে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। নমিতা অক্ষর জানে না, কথা বলার ধরন বোঝে না। নমিতা সেই অর্থে তার সংগ্রামের কথা বলতে পারেনি। সম্ভবত তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি যে তিনি কতটা অসম যুদ্ধে জিতেছেন।
No comments:
Post a Comment