বিখ্যাত শ্রী মহাকালেশ্বর মন্দিরের অজানা কাহিনী
মৃদুলা রায় চৌধুরী, ১২ জুলাই : যদিও ধর্মীয় নগরী উজ্জয়নীতে, বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একটি বিশ্ববিখ্যাত শ্রী মহাকালেশ্বর মন্দির রয়েছে , যা অকালমৃত্যুর ভয় দূর করে বলে বিশ্বাস করা হয়, যার জন্য প্রতিদিন লক্ষাধিক ভক্ত বাবা মহাকাল দর্শন করতে উজ্জয়নীতে আসেন।
এছাড়াও এখানে ভগবান শিব, নিজের ভক্তকে রক্ষা করার জন্য আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং যমরাজকে শিকল দিয়ে বেঁধেছিলেন। ভগবান শিবের এই অলৌকিকতার কারণে, সারা বছর জন্মদিন এবং বিবাহ বার্ষিকীতে, ভক্তরা মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করেন এবং দীর্ঘায়ু ও স্বাস্থ্য কামনা করেন।চলুন জেনে নেই এই কাহিনী-
বিষ্ণুসাগরের তীরে চোরিয়াসী মহাদেবের ৩৬ তম স্থান অধিষ্ঠিত ভগবান শ্রী মার্কন্ডেশ্বর মহাদেবের একটি ৫০০০ বছরের পুরনো মন্দির রয়েছে। যা সম্রাট বিক্রমাদিত্যের আমলের বলে মনে করা হয়। মন্দিরের পুরোহিত পন্ডিত দীপ মেহতা জানান যে এটি সেই একই মন্দির যেখানে ঋষি মার্কন্ডেয় কালকে পরাজিত করে মৃত্যুকে জয় করেছিলেন এবং তিনি এখানে চিরঞ্জীবী হয়েছিলেন। পন্ডিত দীপ মেহতা বলেন, পদ্মপুরাণে উল্লেখ আছে যে ঋষি মৃকন্দ মুনি ভগবান ব্রহ্মার তপস্যা করে পুত্র লাভের আশীর্বাদ পান, কিন্তু তাঁর পুত্র ঋষি মার্কণ্ডেয়র আয়ু অল্প ছিল। যার কারণে ঋষি মৃকন্দের পুত্র ঋষি মার্কণ্ডেয়র জন্য চিন্তায় থাকতেন।
একদিন ছেলের অনুরোধে পুরো ঘটনা খুলে বলেন ঋষি। অতঃপর মার্কন্ডেয় অবন্তিকা তীর্থ মহাকাল বনের এই মন্দিরে চিরঞ্জীবী হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ভগবান শিবের কঠোর তপস্যা করেন এবং যখন তাঁর বয়স ১২ বছর তখন যমরাজ তাঁকে নিতে আসেন, তখন ঋষি মার্কণ্ডেয় ভগবান শিবের উপাসনা করছিলেন। সেসময় তিনি শিবের মূর্তি দু হাতে চেপে জড়িয়ে ধরেন।
এসময় ভগবান শিব আবির্ভূত হন এবং যমরাজকে মন্দিরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। সেসময় মহাদেব ঋষি মার্কন্ডেয়কে একটি বর দেন যে তিনি এখন ১২ টি কল্পে বেঁচে থাকবেন। এই আশীর্বাদের পরে, ঋষি মার্কণ্ডেয় চিরঞ্জীবী হন। পুরোহিত পন্ডিত দীপ মেহতা জানান, সারা বছর মন্দিরে অনেক অনুষ্ঠান হলেও শ্রাবণ মাসে মার্কন্ডেশ্বর মহাদেব মন্দিরের দরজা দুপুর ৩টা থেকে খুলে যায়।
রাতে ঈশ্বরের বিশেষ পূজো অর্চনা কর্পূর আরতির পর, পঞ্চামৃত অভিষেক পূজো করা হয়। মঙ্গলা আরতির পর ভক্তরা দিনভর ভগবানের অভিষেক পূজো করেন। এই পূজার পর বিকেল ৪টা থেকে আবারও চলতে থাকে ভগবানের পঞ্চামৃত অভিষেক পূজো, শৃঙ্গার ও সন্ধ্যা আরতি।
শিবলিঙ্গ কেন দক্ষিণমুখী:
মন্দিরের পুরোহিত পন্ডিত দীপ মেহতা জানান যে মার্কন্ডেশ্বর ঋষি এখানে কালকে পরাজিত করে মৃত্যু জয় করেছিলেন এবং চিরঞ্জীবী হয়েছিলেন। এই মন্দিরে কাল অর্থাৎ যমরাজ বন্ধনে আবদ্ধ। মন্দিরে অবস্থিত সিদ্ধ শিবলিঙ্গ দক্ষিণমুখী। এই শিবলিঙ্গে একটি চোখও প্রাকৃতিক ভাবে আছে। এখানে মার্কন্ডেশ্বর মহাদেবের পূজো করলে ভক্তরা স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু লাভ করেন।
No comments:
Post a Comment