শাহজাহানের কন্যা জাহানারার অবিবাহিতা থাকার কারণ ছিল এটি
মৃদুলা রায় চৌধুরী, ১৮ জুন : যদিও মুঘলরা বহু বিবাহের জন্য বিখ্যাত ছিল, কিন্তু যখন তাঁদের মেয়েদের বিবাহের কথা আসতো তখন তারা কোন ঝুঁকি নিতে চাইতেন না। মুঘলরা সবসময় ভয় পেত যে তাঁদের মেয়েদের স্বামী মুঘল শাসন ক্ষমতা দখল করতে পারে। এই কারণেই মুঘলদের আত্মীয়দের সাথে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হত। এই প্রথা শুরু করেছিলেন সম্রাট আকবর। তিনি বলতেন, ক্ষমতা সবসময় একজন মুঘলের হাতে থাকা উচিৎ। মেয়ের স্বামী যেন কোনও ভাবে শাসন ক্ষমতা দখল না করতে পারে, তাই মুঘলরা এই নিয়মটি কঠোরভাবে অনুসরণ করতেন।
মুঘল ইতিহাসে অনেক সম্রাট ছিলেন যাদের কন্যা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কুমারী ছিলেন। শাহজাহানের কন্যা জাহানারাও ছিলেন সেই রাজকন্যাদের একজন।জাহানারার জীবনের একটি মজার উপাখ্যান ফ্রাঙ্কোইস বার্নিয়ার ১৭ শতকে এদেশে থাকার সময় লিপিবদ্ধ করেছিলেন। বার্নিয়ার পেশায় একজন চিকিৎসক ছিলেন এবং সম্রাট শাহজাহানের পুত্র দারা শিকোহের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য নিযুক্ত ছিলেন।
ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ার, যিনি ১৬৫৮ সালে এদেশে এসেছিলেন, তিনি একজন ফরাসি চিকিৎসকের পাশাপাশি একজন রাজনৈতিক দার্শনিক এবং ইতিহাসবিদ ছিলেন। দারাশিকোহ ডাক্তার হওয়ার পর তিনি মুঘল দরবারে স্বীকৃতি পান। ধীরে ধীরে তিনি মুঘলদের কাছাকাছি পৌঁছে যান। তিনি লিখেছেন, সম্রাট শাহজাহান তার মেয়ে জাহানারাকে খুব স্নেহ করতেন। কোন পুরুষ তার মেয়ের আশেপাশে যাক তা মোটেও পছন্দ করতেন না শাহজাহান। এই কারণেই রাজকুমারীর নিরাপত্তার জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়েছিল।
একবার সব রক্ষক থাকা সত্ত্বেও জাহানারার এক প্রেমিক তার সঙ্গে দেখা করতে যায়। শাহজাহানের ঘনিষ্ঠরা তাকে এ তথ্য জানালে তিনি ক্ষুব্ধ হন। বিষয়টি জানতে পেরে সেই প্রেমিককে ধরার নির্দেশ দেন। শাহজাহানের সৈন্যরা সেই ব্যক্তির কাছে পৌঁছনোর আগেই জাহানারা জানতে পারেন পুরো রাজপ্রাসাদে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
প্রেমিককে বাঁচাতে জলের পাত্রে প্রেমিককে লুকিয়ে রাখেন জাহানারা। সর্বাত্মক চেষ্টার পরও যখন জাহানারার প্রেমিককে পাওয়া গেল না, তখন শাহজাহান নিজেই রাজকন্যার ঘরে সন্দেহ করলেন যে তিনি একটি জলের পাত্রে লুকিয়ে আছেন। সেই সময়ে, শাহজাহান কড়াইয়ের জল ফুটোনোর নির্দেশ দেন।
আরও বলা হয়, অন্য একজন জাহানারাকে বিয়ে করার চেষ্টা করলে এই অসভ্যতার জন্য সেই ব্যক্তিকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়। এই কারণেই জাহানারা সারাজীবন কুমারী থেকে যান।
No comments:
Post a Comment