কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে গুরু নানকের জন্মদিন পবিত্র উৎসব হিসেবে পালিত হয়। এই উৎসবকে গুরু নানক জয়ন্তী বলা হয়। শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গুরু নানক। শিখদের ১০ম গুরুর মধ্যে তিনিই প্রথম গুরু। সারা বিশ্বে তাঁর জন্ম গুরু পর্ব হিসেবে পালিত হয়।
গুরু নানক দেব ১৪৬৯ সালে কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জন্মগ্রহণ করেন। এ বছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথি পড়ছে ৮ই নভেম্বর।
এদিন শুধু দেশেই নয় বিদেশের গুরুদ্বারগুলোতেও থাকে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। পাঞ্জাবের স্বর্ণ মন্দিরের ছাড়াও পাঞ্জাবে অনেক সুন্দর এবং বড় গুরুদ্বার রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সে সম্পর্কে-
গুরুদ্বার হরমন্দির সাহেব সিং, অমৃতসর:
এই গুরুদুয়ারা গোল্ডেন টেম্পল বা স্বর্ণ মন্দির হিসেবে বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত। শ্রী হরমন্দির সাহেব এবং দরবার সাহেব নামেও পরিচিত। এটি শিখদের বিশ্বাসের কেন্দ্র। পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরে অবস্থিত গুরুদ্বার হরমিন্দর সাহেবকে বহুবার ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু ভক্তি ও বিশ্বাসের কারণে হিন্দু ও শিখরা এটিকে পুনর্নির্মাণ করে। তার প্রতিটি ঘটনাও এখানে চিত্রিত হয়েছে।
শিখদের চতুর্থ গুরু রামদাস জি এর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। কিছু সূত্র অনুসারে, ১৫৮৮ সালে লাহোরের একজন সুফি সাধক মিয়াঁ মীর এই গুরুদ্বারটির ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। পরে মহারাজা রঞ্জিত সিং এটিকে সোনা দিয়ে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন, যা পরে এটি গোল্ডেন টেম্পল নামে পরিচিত হয়।
তখত শ্রী কেসগড় সাহেব জি, আনন্দপুর সাহেব:
তখত শ্রী কেসগড় সাহেব জি গুরুদুয়ার আনন্দপুর সাহেবের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। এর ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ১৬৮৯ সালে। এই গুরুদ্বারটি নানাভাবে বিশেষ। এখানেই জন্ম হয়েছিল খালসা পন্থের। এছাড়াও, ১৬৯৯ সালের বৈশাখীতে, গুরু গোবিন্দ সিং এখানে খন্ডে দি পাহুলের দীক্ষাও শুরু করেছিলেন। এর একটি সমৃদ্ধ ও গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। হানাদার বাহিনী কখনোই এখানে পৌঁছাতে পারেনি। এখানে গুরু গোবিন্দ সিংর খন্ড অর্থাৎ দু মুখো তলোয়ার, তাঁর ব্যক্তিগত ছুরি, বন্দুক ইত্যাদি রাখা আছে।
গুরুদ্বারা দুঃখ নিবারন সাহেব, পাতিয়ালা:
গুরুদ্বার দুঃখ নিবারন সাহেব পাঞ্জাবের একটি জনপ্রিয় গুরুদ্বার। অলৌকিক জলের জন্য বিখ্যাত এই গুরুদ্বার। বলা হয় যে কোনও রোগী যদি পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে এখানে পুকুরে ডুব দেয় তাহলে সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।
ফতেহগড় সাহেব:
শিখ ধর্মের ইতিহাসে এই গুরুদ্বারের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ইতিহাস অনুসারে, মুঘলরা জোরপূর্বক হিন্দুদের তাদের ধর্ম পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছিল, যার কারণে একটি দীর্ঘ যুদ্ধ হয়। তখন গুরু গোবিন্দ সিং নিজের পরিবার আলাদা হয়ে যায়। মুঘল সৈন্যরা যখন তাঁর সন্তানকে ধরে ধর্ম গ্রহণ করতে চায়, সে অস্বীকার করে আর তাকে তখন মেরে ফেলা হয়। গুরু গোবিন্দ সিং-এর সন্তানদের শহীদ হওয়ার স্মরণে এই গুরুদুয়ারা তৈরি করা হয়েছে।
গুরুদ্বার দরবার সাহিব তারন তারান, মাঝা:
এই বিশাল এবং সুন্দর গুরুদ্বারে কখনই ভিড় হয় না। গুরুদ্বার দরবার সাহিব তারন তারান পঞ্চম গুরু, গুরু শ্রী অর্জন দেব দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তারন তারান সেই জায়গা যেখানে শিখরা বিদ্রোহের নীতি তৈরি করত।
No comments:
Post a Comment