আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে এক ভয়ানক ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার রুশ প্রতিপক্ষ ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘বিশেষণ’ দিয়ে শুধু একজন নৃশংস স্বৈরশাসকই নন, মানবতার হত্যাকারীও বলছেন।
জবাবে পুতিন তার নিজস্ব কৌশলে তাদের জবাব দিচ্ছেন। কিন্তু একই সঙ্গে ভারতও আমেরিকার উদ্বেগ ও ক্ষোভকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না।
রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানিসহ অন্যান্য বিষয়ে আমেরিকার কথা শোনেনি ভারত। ভারতের এই পদক্ষেপকে সমর্থন দিচ্ছেন পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞরা।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহু দশক পরেও আমেরিকার অসন্তোষকে পাত্তা দেয়নি ভারত।
প্রবীণ সাংবাদিক রঞ্জিত কুমার, বলেছেন যে আমেরিকার চাপের কাছে মাথা নত হওয়া ভারতের জন্য ভালো নয়।
প্রাক্তন ফরেন সার্ভিস অফিসার এসকে শর্মা বলছেন, আমেরিকাও ভারতের এই বাধ্যবাধকতা বুঝতে পারছে। তবে, তিনি বলেছেন যে ইউক্রেন ইস্যুতে আমেরিকার উদ্দেশ্য উপেক্ষা করা ভারতের পক্ষে একটি সাহসী পদক্ষেপ বলা চলে।
এসকে শর্মা বলেছেন যে ভারত পররাষ্ট্রনীতি, কৌশলগত নীতি, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেছেন যে আমেরিকারও এখানে একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে যে তারা ভারতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খুব বেশি চাপ প্রয়োগ করতে পারে না। আমেরিকা জানে, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার চাপ বাড়লে ভারত অমনোযোগী হতে পারে। তাই দক্ষিণ সাগর ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমেরিকা ভারতের ওপর বেশি চাপ দেওয়া এড়িয়ে যাচ্ছে।
এয়ার ভাইস মার্শাল (পূর্ব) এনবি সিং বলেছেন, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের সব দেশই রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস, অপরিশোধিত তেল এবং অন্যান্য পণ্য কম দামে নিচ্ছে। সেখানকার ব্যাংকগুলো রাশিয়াকে অর্থ প্রদান করছে। ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল পাচ্ছে, তাহলে কিনবে না কেন?
বিদেশ সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা এবং বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্করও একই যুক্তি দিয়েছেন। এয়ার ভাইস মার্শাল বলেছেন যে ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ৭০ শতাংশের বেশি রাশিয়া থেকে কেনা হয়। তাই ভারত রাশিয়াকে উপেক্ষা করতে পারে না।
তৃতীয় প্রধান কারণ আঞ্চলিক নিরাপত্তা উদ্বেগ। তিনি বলেন, ভারত ও চীনের মধ্যে যখনই মধ্যস্থতার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তখনই রাশিয়ার সহায়তা এসেছে।
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের সাথে কোয়াড ফোরামের একটি অংশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও চীন আঞ্চলিকভাবে ভারতের প্রতিবেশী দেশ। রাশিয়া একটি কৌশলগত অংশীদার দেশ। তাই আঞ্চলিক, অর্থনৈতিক, কৌশলগত সমীকরণের কথা মাথায় রেখেই ভারত পদক্ষেপ নিয়েছে।
No comments:
Post a Comment