কল্পনাকে বাস্তবের রূপ দিতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির পথে ফেসবুক - Breaking Bangla |breakingbangla.com | Only breaking | Breaking Bengali News Portal From Kolkata |

Breaking

Post Top Ad

Sunday, 1 August 2021

কল্পনাকে বাস্তবের রূপ দিতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির পথে ফেসবুক




নিউজ ডেস্ক: আপনি অফিস কিংবা ঘরে বসে আছেন, কিন্তু চাইলেই কল্পনায় চলে যেতে পারেন কোনো সমুদ্রে সৈকতে কিংবা অন্য কোথাও। মানুষের এই কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে দীর্ঘদিন ধরে অর্থ লগ্নি আর প্রচেষ্টা চলছে। ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে মিশেল ঘটিয়ে মানুষকে তার বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে যেতেই কাজ করবে মেটাভার্স।


কয়েক বছর ধরেই এমন রিয়েলিটির দিকে এগোতে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ মনে করেন, নতুন এ প্রযুক্তি ইন্টারনেট দুনিয়ায় বিপ্লব হয়ে আসবে। তাই তো এমন প্রযুক্তি তৈরির কাজও শুরু করেছেন তিনি।


১৯৯২ সালে নিল স্টিফেনসনের ‘স্নো ক্র্যাশ’ উপন্যাসের চরিত্ররা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট ব্যবহার করে ডিজিটাল বিশ্বে বসবাসের গল্প হয়ে ওঠেন। সিলিকন ভ্যালির প্রকৌশলীদের কাছে এ উপন্যাস দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। বলা হচ্ছে, ওই উপন্যাসের প্রভাবেই তৈরি হচ্ছে মেটাভার্স। বিভিন্ন কোম্পানি বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে এ প্রযুক্তিতে। পিছিয়ে নেই জুকারবার্গও।


মার্ক জুকারবার্গ জানান, তার কোম্পানি মেটাভার্সের নিজস্ব ভার্সন তৈরি করবে। তার জন্য কোম্পানির মধ্যে একটি বিশেষ টিম তৈরি করেন তিনি। টেক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জে দেয়া সাক্ষাৎকারে জুকারবার্গ বলেন, ‘এটা প্রযুক্তি দুনিয়ার পরবর্তী বড় অধ্যায় হতে চলেছে। আগামী পাঁচ বছরে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি থেকে মেটাভার্স কোম্পানিতে পরিণত হবে ফেসবুক।’


এ বিষয়ে টিমের কার্যনির্বাহী এন্ড্রু বোসওর্থ বলেন, এই টিমটি মূলত ফেসবুকের ভার্চুয়াল রিয়েলিটির একটি অংশ হিসেবে কাজ করবে।


শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের দুটো দিক ছিল। ফেসবুকে তথ্য প্রচার করা, সেটা রাজনৈতিক বা সামাজিক বা অর্থনৈতিক হোক। পরে এটি রাজনীতিবিদদের জন্য সাপেবর হয়ে ওঠে।


সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন করোনাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ তুলে মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন। পরে ফেসবুক তাদের করোনায় মানুষকে সচেতন করার ও ভ্যাকসিনের তথ্যগুলো তুলে ধরার ডাটা উপস্থাপন করলে বাইডেন কিছুটা নমনীয়তা দেখান।


ফেসবুকের আরেকটি দিক হচ্ছে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা। বিশেষ করে ছোট ছোট বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা, বিজ্ঞাপনদাতা ফেসবুক ছাড়া কল্পনা করতে পারে না। গত ২৮ জুলাই ফেসবুক তার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে এক জরিপের ফলাফলে। এতে দেখা যায়, ফেসবুকের রাজস্ব আয় বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। এ অর্থবছরে শেয়ার একশ বিলিয়ন পার করবে বলেও আশাবাদী তারা।


কীভাবে এ সাফল্য ঘরে তুলছে ফেসবুক। একটি হচ্ছে বিশ্বে এখন ফেসবুকের দৈনিক ব্যবহারকারী ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন। বলা যায় সামাজিক নেটওয়ার্কই এর মূলমন্ত্র। ফটো শেয়ারিং অ্যাপস ইনস্টাগ্রাম, বার্তা আদান প্রদানের জন্য হোয়াটস অ্যাপ এবং মেসেঞ্জার। এগুলোর ব্যবহার মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।


ফেসবুকের সক্রিয় অ্যাপগুলোর অনেক ইতিবাচক দিকও আছে। বিশেষ করে করোনা মহামারিতে অনেকেই উপকৃত হচ্ছেন। কিছু অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এটি বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্যও অনেক বড় প্লাটফর্ম।।


ফেসবুকের মূল আয়ের উৎস বিজ্ঞাপন কৌশল। শুধু বিজ্ঞাপন থেকেই আয় আসে ৯৮ শতাংশ। ফেসবুকের আধিপত্যের আরেক প্লাটফর্ম ইনস্ট্রাম, যেখান থেকে গত বছর আয় হয়েছে ৫৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১২ সালে চালু করা ইনস্টাগ্রাম যার শেয়ার ছিল ১ বিলিয়ন এখন তা ২০ বিলিয়ন।


ডেবরা উইলিয়ামসন নামে একজন ই-মার্কেটার বলেন, বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে ডাটা, কল বাবদ দ্বিগুণ লাভ করে অন্যদের চেয়ে। প্রত্যেক ব্যবহারকারী বাবদ সে পায় ৮ ডলার, যা টুইটারের চেয়েও বেশি। তারা ব্যবহারকারীর প্রতিটি দিক চিহ্নিত করে যা অনলাইনে বিজ্ঞাপনের আওতায় আনা যায়। যদি তারা বিজ্ঞাপন দেখে পণ্য কিনে সেটিও।


এমনকি অনেক চীনা বিনিয়োগকারীও টাকা ঢেলেছে ফেসবুকে। ফেসবুক অ্যাপ চীনে নিষিদ্ধ। কিন্তু চীনের বিনিয়োগকারীরা ওয়েস্টার্ন কাস্টমারদের জন্য এ আমেরিকান অনলাইন মার্কেটে বিনিয়োগ করেন। করোনাকালে দেখা গেছে, আমেরিকান বয়স্করা গড়ে ৩৫ মিনিট ব্যবহার করেন ফেসবুক অ্যাপ।


২০১৬ সালের পর থেকে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় ফেসবুককে। মামলার মতো আইনি জটিলতাও মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাদের। ই-কর্মাস সাইটেও আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসায়িক দিক থেকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।


গেমিংয়ের ক্ষেত্রেও প্রতিযোগিতা বেড়েছে অনেক। ডিজিটাল মার্কেটে এবার ফেসবুক আরেকটি দিক উন্মোচন করতে যাচ্ছে, সেটি হলো এই মেটাভার্স। ফলে ফেসবুক এমন একটি প্রযুক্তিতে লগ্নি করছে, যেখানে সংস্থাটি মনে করে মানুষ এক জায়গায় বসে অন্য জায়গায় থাকার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারবেন। তার জন্য অ্যাকুলাসের মতো ব্র্যান্ড অধিগ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রের সোশ্যাল কোম্পানিটি। জুকারবার্গ স্বীকার করেন যে, এখন বাজারে যে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেটগুলো রয়েছে, তা দৈনন্দিন ব্যবহারের তুলনায় কিছুটা বড়। বিশেজ্ঞরা বলছেন, নতুন প্রযুক্তিতে ফেসবুক আগামী পাঁচ বছরে কতটা সফল হবে তা এখনই বলা মুশকিল।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad